
কলেজ পড়–য়া সেনবাগের সুমির স্বপ্ন কি পূরণ হবে না
রফিকুল আনোয়ার
২০০৮। পরিবারের সাথে সারদীয় দূর্গা উৎসবের আনন্দে মেতে উঠার জন্য ৮-৯ বছর বয়সি শিশু সেনবাগ উপজেলার বীজবাগের সুমি রানী সূত্রধর মা বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ফেনীতে গিয়ে পূজা উৎসব পালন করেবে । মা বাবার একমাত্র মেয়ে, গরিব হলেও ছিল অনেক আদরের। মেয়ের বায়না মতে, পরিবারের লোকজন সিএনজি করে ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা করেছিল। কিন্তু তাদের এই উৎসব যাত্রা যে আজীবনের জন্য কান্না বয়ে আনবে তা কেউ জানত না। সুমিদের সিএনজি ফেনীর ছিলোনিয়া নামক স্থানে গেলে পিছন থেকে আর একটি সিএনজি সুমিদের সিএনজি কে জোরে ধাক্কা দেয়। এতে মায়ের কোলে থাকা সুমি সিএনজি থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। তখন সিএনজির একটি চাকা সুমির ডান পায়ে উঠে যায় । এতে ভেঙে যায় সুমির ডান পা। চিকিৎসার এক পর্যায়ে ডাক্তাররা সুমির পা কেটে ফেলে। সে থেকে যাত্রা শুরু সুমির, দূর্বিষহ জীবনের। সহপাঠিরা তেমন একটা মিশত না সুমির সাথে খেলার সাথীরা থাকত দূরে দূরে। অন্যের নির্ভরতা ছাড়া চলত না এক মূহুর্তও। তাচ্ছিল্য অবহেলা ও করুনা নিত্য সঙ্গী হয়ে দাড়ায় সুমির জীবনে। নিয়তীকে মেনে নিয়ে পারিবারিক দারিদ্রতাকে উপেক্ষা করে সুমি লেখাপড়ায় মন দেয়। ৫ম, ৮ম ও এসএসসিতে ভাল ফলাফল করে সুমি। ঠিকমত বইপত্রও কিনতে পারে নি সুমি। নবীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারী মুজিব কলেজে ভর্তি হয় সুমি রানী সূত্রধর। পিতা বাবুল চন্দ্র সূত্রধর পেশায় কাঠমিস্ত্রী। মাতা সিনু রানী সূত্রধর গৃহিনী। কলেজে আসতে প্রতিদিন সুমির প্রয়োজন পড়ে ১০০ টাকা। এই ১০০ টাকা প্রতিদিন তার পরিবারের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব ওঠে না। যার প্রেক্ষিে তনিয়মীত কলেজ করা হয় না সুমির। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। এই ৪ জনের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে সুমির বাবা হিমশীম খাচ্ছে। দুই একদিন পরেই সুমির এইচ এস সির ফরম ফিলাপ। এখানে প্রয়োজন ২৫০০ টাকা। এই ২৫০০ টাকার ব্যবস্থা কোথায় থেকে হবে তা নিয়ে দুশচিন্তায় সুমির পরিবার । কিন্তু এখনও সমস্ত বই পত্র কেনা হয়নি সুমির। ভাল শিক্ষকের কাছে জীবনে একবার প্রইভেটও পড়তে পারে নি সে। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত সুমির পরিবারের পক্ষে তার লেখাপড়ার খরচ চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাভাবে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের অনিশ্চয়তায় ভুগছে সুমি। সুমি সমাজে অন্য ১০ টা মেয়ের মত লেখাপড়া করে মাথা উঁচু করে দাড়াতে চায়। কৃত্রিম পা লাগিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পেতে চায় সুমি। সুমির কৃত্রিম পা লাগাতে প্রয়োজন ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু কে দেবে এত টাকা আমাদের সমাজে অনেকে আছেন যারা অকারনে অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু জীবন সংগ্রামে সুমিদের মত যারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তাদের পাশে কিঞ্চিত সহযোগীতার হাত নিয়ে দাড়ালে সারাদেশের সুমিরা সাবলম্বী হতে পারে। এতে একটি পরিবার বেঁচে যায় পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে আর একটি জাতি ধন্য হয় শিক্ষিত মা পেয়ে। আসুন আমরা যারা সমাজের বিত্তশালী তারা সুমিদের পাশে দাড়াই, সুমিদের স্বপ্ন পূরনে হাত বাড়িয়ে দেই।